দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সহিংসতা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম।
তিনি জানান, ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অন্তত ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে থানা-পুলিশ ১৩ জন, কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ৩ জন এবং গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
থানা-পুলিশের গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ নাইম, মোহাম্মদ আকাশ, আহমেদ সাগর, মো. আবদুল আহাদ, মো. নজরুল ইসলাম (মিনহাজ), মো. জাহাঙ্গীর, মোহাম্মদ সোহেল রানা, মো. আবদুল বারেক শেখ (আল আমিন), রাশেদুল ইসলাম, সোহেল রানা ও শফিকুল ইসলাম।
সিটিটিসি গ্রেপ্তার করেছে মো. প্রান্ত শিকদার (ফয়সাল), আহম্মেদ প্রান্ত ও আবুল কাসেম রাজু হোসাইনকে। আর ডিবি গ্রেপ্তার করেছে মো. সাইদুর রহমানকে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার নাইমের কাছ থেকে লুট করা নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ওই টাকা দিয়ে কেনা একটি টেলিভিশন ও একটি টাচ ফ্রিজ জব্দ করা হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া অনেকেই ভিডিও ফুটেজে ধরা পড়েছে। আরও গ্রেপ্তার হবে। তিনি বলেন, প্রতিবাদ বা ক্ষোভ প্রকাশ এক বিষয়, কিন্তু তার আড়ালে অফিসে ঢুকে আগুন দেওয়া, ভাঙচুর ও লুটপাট করা সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ। এসব কর্মকাণ্ড ‘ব্যাড ইনটেনশন’ থেকে করা হয়েছে এবং জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
গ্রেপ্তারদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ কোনো রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজছে না। হামলায় জড়িতরা দুষ্কৃতকারী এবং আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। তারা যে দলেরই হোক বা যে মতাদর্শেরই হোক, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের বিচার হবে।
তিনি আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে সহিংসতা ছড়ানোর প্রবণতা উদ্বেগজনক। প্রযুক্তির অপব্যবহারে দ্রুত ভুল তথ্য ও অপপ্রচার ছড়িয়ে পড়ছে, যা সহিংসতা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।
হামলার সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, তখন ঘটনাস্থলে চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিল। সীমিত জনবল নিয়ে কঠোর অভিযান চালালে পুলিশ ও সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঝুঁকি তৈরি হতো। পরিস্থিতি বিবেচনায় সর্বোচ্চ সংযম দেখানো হয়েছে এবং কোনো প্রাণহানি না হওয়াটাকেই বড় অর্জন হিসেবে দেখছে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৮ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শাহবাগ এলাকায় লোকজন জড়ো হয়। পরে তারা কারওয়ান বাজারের দিকে গিয়ে রাত আনুমানিক সোয়া ১১টা থেকে দিবাগত রাত ২টা-আড়াইটা পর্যন্ত প্রথম আলো ও পরে দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়।
গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় প্রথম আলো ইতোমধ্যে মামলা করেছে বলে জানান নজরুল ইসলাম। ডেইলি স্টারের মামলার প্রক্রিয়া চলমান এবং প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের কাজ চলছে।
